প্রকাশিত: / বার পড়া হয়েছে
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তুরাগ তীরে ইজতেমা ময়দানে বয়ান শুরু করেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা। আর ওই বয়ানের তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়ের।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বাদ ফজর বয়ান করবেন পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউর হক। ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম ধাপে যোগ দিয়েছেন শুরায়ে নেজাম অংশের অনুসারীরা। দ্বিতীয় ধাপেও তারা থাকবেন।
আর তৃতীয় ধাপে অংশ নেবেন ভারতের মাওলানা সাদ অনুসারীরা। এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার মুসল্লিরা মাঠে প্রবেশ করেছেন। তবে বুধবার ও বৃহস্পতিবার দেশের ৪১ জেলার মুসল্লিদের বড় অংশ মাঠে প্রবেশ করতে দেখা যায়।
শুক্রবার টঙ্গীতে সর্ববৃহৎ জুমা আদায় হবে। জুমার নামাজে ইমামতি করবার কথা রয়েছে বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়েরের।
এবারের ইজতেমা শুরায়ে নেজামের (জুবায়ের অনুসারী) অধীনে দুই ধাপে অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম পর্ব ৩১ জানুয়ারি শুরু হয়ে ২ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ৩ ফেব্রুয়ারি। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
মাঝে আট দিনের বিরতি দিয়ে আগামী ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভি অনুসারী এবারে বিশ্ব ইজতেমার শেষ পর্ব।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সরেজমিনে দেখা যায়, ময়দানের চারপাশের ১৭টি প্রবেশপথ দিয়ে মুসল্লিরা বাসে, ট্রাকে ও হেঁটে মাঠে প্রবেশ করছেন। কারও হাতে ব্যাগ, কারও মাথায় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। নিজ জেলা থেকে জামাতবদ্ধ হয়ে ময়দানে প্রবেশ ক রছেন মুসল্লিরা। ময়দানে প্রবেশের পর তারা তাদের নির্ধারিত জায়গায় (খিত্তা) অবস্থান নিচ্ছেন।
কুষ্টিয়া জেলা থেকে মাওলানা মাহতাম সামাদের ৩৬ জন সাথী নিয়ে ইজতেমা ময়দানে এসেছেন। অবস্থান নিয়েছেন নিজেদের খিত্তায়। কথা হয় তাদের সাথে।
তারা বলেন, গত বছরও ইজতেমায় অংশ নিয়েছিলাম। এবার ইজতেমা শুরুর একদিন আগেই সাথীদের নিয়ে ময়দানে চলে এসেছি। শুক্রবার আমাদের আরো কয়েকজন সাথী ময়দানে পৌঁছে আমাদের সাথে যোগ দেবেন।
ময়মনসিংহ জেলা থেকে খশরু মুন্সী (আমির) ৮৯ জন সাথী নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে ময়দানে নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন। তবে সাথীদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হয় তাদের। তিনি বলেন, সাথীরা নিজ দায়িত্বে ময়দানে বিছাতে চট নিয়ে এসেছেন। তবে এবার ইজতেমা আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে ময়দানে বাঁশ পোতা হলেও চটের সামিয়ানা টানানো হয়নি। আমাদেরও বিষয়টি জানা ছিল না।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ৪১টি জেলার প্রায় কয়েক হাজার মুসল্লি ময়দানে অবস্থান করছেন।
পন্টুন নির্মাণ প্রতিবারের ন্যায় এবারো সেনাবাহিনীর সদস্যরা তুরাগ নদের উপর পাঁচটি পন্টুন তৈরি করেছে। সেই সঙ্গে বিআইডব্লিউটিএ আরো একটি পন্টুন তৈরি করেছে। যা দিয়ে সাময়িকভাবে মুসল্লিরা রাজধানী উত্তরা-কামাড়পাড়া অংশ দিয়ে ময়দানে যাতায়াত করতে পারবেন।
চিকিৎসা সেবা: ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি প্রায় ২০টি সংগঠন তাদের অস্থায়ী চিকিৎসা ক্যাম্প স্থাপন করছেন বলে জানা যায়। এছাড়া মুসল্লিদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে আটটি বিশেষজ্ঞ টিম কাজ করবে। মুমূর্ষু রোগী পরিবহনের জন্য ১১টি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রয়েছে। তাছাড়া ইজতেমা উপলক্ষে গাজীপুরের বিভিন্ন হাসপাতালের সকল চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ছুটি না নিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আফজালুর রহমান।
অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা: ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের অধিকাংশ গ্যাস সিলিন্ডার (এলপিজি) ব্যবহার করছেন। তাই এবারের ইজতেমায় অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। প্রতিটি খিত্তায় ফায়ার ফাইটার, দুটি স্টিম গুইশার ও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র থাকবে। এছাড়াও চারটি অ্যাম্বুলেন্স, আগুন নিয়ন্ত্রণে তিনটি গাড়ি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তাছাড়া ইজতেমা ময়দানে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের জন্য বিশেষ কয়েকটি টিম রয়েছে বলে জানিয়েছেন টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা শাহিন আলম।
গ্যাস সংযোগ: ইজতেমায় আগত বিদেশি মুসল্লিদের রান্নার জন্য টঙ্গী তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ অস্থায়ী গ্যাস সংযোগ দিয়ে থাকে। এবারেও ইজতেমা ময়দানে ২০০টি গ্যাস সংযোগ ও তা দেখভালের জন্য একটি টিম ময়দানে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন টঙ্গী তিতাস গ্যাস আঞ্চলিক বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মেজবাহ-উর রহমান।
জুবায়ের অনুসারীদের আয়োজক কমিটির গণমাধ্যম সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, মঙ্গলবার বিকেল থেকেই ময়দানে মুসল্লিরা আসতে শুরু করেছেন। তারা নিজেদের খিত্তায় অবস্থান নিচ্ছেন। এবারের আসরে অধিক মুসল্লিদের সমাগম ঘটবে। শুক্রবার দুপুরের পর ময়দান কানায় কানায় ভরে উঠবে বলে আশা করছি।
তবে এবার ময়দানে অধিকাংশ স্থানে সামিয়ানা টানানো হয়নি এমন প্রশ্ন তিনি বলেন, আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরুব্বিরা এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ময়দানে আগত মুসল্লিরা সামিয়ানা নিজ দায়িত্বে নিয়ে আসবেন।